রফিকুল হক (৮ জানুয়ারি ১৯৩৭-১০ অক্টোবর ২০২১) ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ছড়াকার। তার রচিত বর্গী এলো দেশে এবং পান্তাভাতে ঘি বাংলা সহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তাকে বলা হতো ছড়াসাহিত্যের জাদুকর। কেউ বলেছেন তিনি ‘ছড়ার জীবন্ত কিংবদন্তি’ তিনি বাংলাদেশের প্রবীণতম সাংবাদিক হিসাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যুগান্তর পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি শিশু সংগঠন চাঁদের হাটের প্রতিষ্ঠাতা।তিনি দাদু ভাই নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন।পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক। বিখ্যাত পল্লীগীতি ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা কোন দূরে যাও চইলা...’ তারই রচনা।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন : তার জন্ম ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারী তৎকালীন বৃটিশ ভারতের কুচবিহারে। ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের পর রংপুরে পিতার সাথে চলে আসেন। রংপুর সদর উপজেলার কামাল কাছনায় বসতি স্থাপন করেন। তার বাবার নাম ইয়াসিন উদ্দিন আহম্মদ, মাতার নাম রহিমা খাতুন। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে বি, এ পাস করেন।এছাড়াও তিনি জুরিখের ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইন্সটিটিউট (আইপিআই) থেকে সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাংবাদিকতা : রফিকুল হক সুদীর্ঘ ৫৯ বছর তিনি নানা পদে সংবাদপত্রের জগতে সম্পৃক্ত ছিলেন। বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সংবাদপত্র প্রকাশনার জগতে তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬১ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসাবে। এরপর দৈনিক জেহাদ, সোনার বাংলা, দৈনিক পয়গাম, দৈনিক পূর্বদেশ, সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা, দৈনিক জনতা, বাংলাদেশ অবজারভার, আজাদ, লালসবুজ প্রভৃতি পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক পূর্বদেশ ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলে সেখানে তিনি ফিচার এডিটর হিসাবে কাজ করেন এবং সরকারী আদেশে ১৯৭৫ সালের ৬ জুন সব পত্রিকা বন্ধ না-হয়ে যাওয়া পর্যন্ত একনাগাড়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে সরকারি উদ্যোগে জাতীয় সাপ্তাহিক পত্রিকা কিশোর বাংলা বের হলে সেখানে তিনি কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি সাফল্যের সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি দৈনিক রূপালী পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় যোগ দেন। যুগান্তরের ফিচার এডিটর হিসেবে তিনি আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন।
কিশোর বাংলার সম্পাদনা : তিনি বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা পত্রিকার কার্যনর্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এটি ছিল একটি জাতীয় সাপ্তাহিক। তার দক্ষ সম্পাদনায় কিশোরদের জন্য নিয়মিত সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসাবে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথমে দৈনিক বাংলা থেকে এবং পরে অবজার্ভার ভবন থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো। প্রথমে নুরুল ইসলাম পাটোওয়ারী ও পরে এস. এম. পারভেজ-এর নাম সম্পাদক হিসাবে থাকলেও রফিকুল হক দাদুভাই ছিলেন কিশোর বাংলার প্রধান অধিকর্তা ও প্রাণপুরুষ।
চাঁদের হাট : তিনি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় শিশুদের পাতা চাঁদের হাট সম্পাদনা করতেন। তারই সূত্রে তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠান চাঁদের হাট প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রকাশনা : তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি। বর্গী এলো দেশে, পান্তাভাতে ঘি, নেবুরপাতা করমচা, আম পাতা জোড়া জোড়া, রফিকুল হক দাদু ভাই-এর সমকালীন ছড়া, বই বই হই চই, প্রাচীন বাংলার রূপকথা।
পুরস্কার : বাংলা একাডেমী পুরস্কার - ২০০৯, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার, নিখিল ভারত শিশু সাহিত্য সংঘ সম্মাননা, বিশ্ব সাহিত্য সম্মেলনে (পাটনা ভারত) স্ক্রোল অব অনার।
মৃত্যু : দৈনিক যুগান্তরের ফিচার এডিটর বাংলাদেশের প্রবীণ সাংবাদিক রফিকুল হক দাদুভাই ১০ অক্টোবর ২০২১ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা রাজধানীর মুগদার নিজ বাসায় মারা যান তিনি। তিনি বাধ্যর্কজনিত বিধি জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০২০ সালে পরপর দুইবার তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।