ঘাটুতে মজিয়া মন
ঘাটু গানে শুধু রাধা-কৃষ্ণের কথা আছে, তা-ই নয়। গ্রামের সাধারণ নর-নারীর জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা ঘাটু গানে উঠে এসেছে। ঘাটু গান অতি সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকার উত্তরাঞ্চলে ঘাটু গানের ব্যাপক চর্চা বা প্রচলন ছিল। এই নাটকে ঘাটুর দলের লোকদের হাসি-আনন্দ, ব্যথা-বেদনার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। স্বার্থবাদী লোভী, হিংসুটে মানুষ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কীভাবে চক্রান্ত করে ঘাটু দলের ওপর ভয়ংকর বিপদ টেনে এনেছিল এবং আনন্দে ভরা গ্রামকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিল, তা দেখানো হয়েছে। আশা করি এ বই পাঠ করে মানুষ ঘাটু গান ও গ্রাম্য সমাজ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।
120 Ratings
৳150
৳250
Save 40 %
-
Dhaka city
Cash on Deliver
-
7
Days Happy Returns
-
Dhaka City COD (1kg-7kg)
+ ৳65
-
Outside Dhaka city COD (1kg-4kg)
+ ৳109
-
Sundarban Courier (1kg-4kg)
+ ৳69
ঘাটু গান রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা-বিরহব্যথার গান। গ্রামের কৃষক সমাজের মধ্যে একসময় এই গানের খুব প্রচলন ছিল। এ গানের দুটি ধারা রয়েছে ১. শ্যামধারা, ২. রায়ধারা। এগারো-বারো বছরের ছেলেদের ঘাটু গান শেখানো হতো। ঘাটুর আসরে এক ছেলেকে শাড়ি পরিয়ে রায় সাজানো হতো, অন্যজনকে শ্যাম। তারপর দুজনের মধ্যে শুরু হতো পাল্টাপাল্টি নাচ-গান। আবার কখনো কোনো একটি ছেলেকে রায় অথবা শ্যাম সাজিয়েও গান গাওয়া হতো। বাদ্যযন্ত্রের ক্ষেত্রে ঢোলের প্রাধান্য ছিল খুব বেশি। তবে করতালের ব্যবহারও ছিল। একদল লোক বৃত্তাকারে বসে ঢোলের তালের সাথে হাতের তালি বাজিয়ে বাহার দিত। তারা ছেলের গানের সাথে দোহারের কাজ করত। ঘাটুর ছোকরা বৃত্তের মাঝখানে থেকে নেচে নেচে গান করত।
আগেকার দিনে সাধারণত কৃষক শ্রেণির লোকজন ঘাটু গান করত। তারা সর্বদাই ঐক্যবদ্ধ থাকত। অন্যায়-অপকর্মের বিরুদ্ধে ছিল তাদের অবস্থান। যাতে গ্রামে কোনো প্রকার অন্যায়-অপকর্ম না থাকে তার জন্য তারা সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যেত।
ব্রিটিশ আমলে ঘাটু গান মানুষের বাড়ি বাড়ি হতো। যেদিন যে বাড়িতে ঘাটু গান হতো সে বাড়িতে খাওয়ার ব্যবস্থা হতো। গ্রামের সবাই ঘাটুর দলের লোকদের খুব পছন্দ করত। তবে কিছু লোক ছিল, তারা ঘাটু গানের বিরোধী ছিল। কারণ ঘাটুর দলের সততার কারণে তারা গ্রামে অসৎ কাজ করতে পারত না। কোনো প্রকার অন্যায় কাজ করতে গেলেই ঘাটুর দলের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে হতো। দ্বন্দ্বের জের হিসেবে একসময় জমিদারকে ফুঁসলিয়ে পক্ষে নিয়ে ব্রিটিশবিরোধী বলে ঘাটুর দলের ওপর নানাভাবে চাপ দিত কুচক্রী মহল। অনেক সময় সহজ-সরল ঘাটুর দলের লোকদের সঙ্গে গ্রামের কুচক্রী মহল, জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর মারামারিও হতো। গানের লোকদের নানারকম মিথ্যা মামলা জড়াত ওরা। ওই সব মামলায় পড়ে গানের দলের লোকজন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তারা সহজ-সরল অশিক্ষিত মানুষ। কেউ কেউ মিথ্যা অভিযোগে জেলে যেত, জমি-সম্পত্তি বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হতো। পুলিশি হয়রানির ফলে এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঘাটু গান হারিয়ে যেতে থাকে।
বহুদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে, অরণ্যে কিংবা নদীর বুকে নৌকায় ঘাটু গান গাওয়া হতো। চক্রান্তকারীরাও থেমে থাকেনি। মিথ্যা মামলা করতেই থাকে তাদের ওপর। অবশেষে ঘাটু গানের লোকজন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একেবারে ছেড়ে দেয় ঘাটু গান।
যারা ঘাটু গান করত তাদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক লোক এখনো বেঁচে আছে। তাদের কাছ থেকে গানের কথা সুর, বাদ্যযন্ত্রের বোল, তাল-লয় ইত্যাদি উদ্ধার করা একান্ত প্রয়োজন। অশিক্ষিত গায়েনদের কেউ কেউ এই সমৃদ্ধ ঘাটু গান মুখে মুখে রচনা করত। কেউ সুর করে সবার মাঝে ছাড়িয়ে দিত।
ঘাটু গানে শুধু রাধা-কৃষ্ণের কথা আছে, তা-ই নয়। গ্রামের সাধারণ নর-নারীর জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা ঘাটু গানে উঠে এসেছে। ঘাটু গান অতি সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকার উত্তরাঞ্চলে ঘাটু গানের ব্যাপক চর্চা বা প্রচলন ছিল। এই নাটকে ঘাটুর দলের লোকদের হাসি-আনন্দ, ব্যথা-বেদনার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। স্বার্থবাদী লোভী, হিংসুটে মানুষ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কীভাবে চক্রান্ত করে ঘাটু দলের ওপর ভয়ংকর বিপদ টেনে এনেছিল এবং আনন্দে ভরা গ্রামকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিল, তা দেখানো হয়েছে। আশা করি এ বই পাঠ করে মানুষ ঘাটু গান ও গ্রাম্য সমাজ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।
| Title | ঘাটুতে মজিয়া মন |
| Author | কামরুল ইসলাম বাচ্চু |
| Cover Type | Hard Cover |
| Paper Type | White Print |
| Publisher | সাহিত্যদেশ |
| Edition | 1st |
| Number of Pages | 80 |
| Country | বাংলাদেশ |
| Language | Bangla |
| ISBN | 9789849973386 |


